নগদ মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খোলার নিয়ম

নগদ মোবাইল ব্যাংকিং হচ্ছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের একটি ডিজিটাল মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ঘরে বসে লেনদেন করার ক্ষেত্রে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (ডিএফএস) বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে নগদ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের একটি উদ্যোগ, যা জনগণের দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনের চাহিদাগুলোকে করবে একেবারেই ঝামেলাহীন।
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খোলার নিয়ম




বাংলাদেশের জনপ্রিয় থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেড (টিডিটিএল) নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এর সার্বিক টেকনিক্যাল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেকোনো মোবাইল ফোনে নগদ (Nagad) অ্যাকাউন্ট খুলে একজন গ্রাহক দেশের যে কোনো স্থান থেকে নিজের মোবাইলে টাকা জমা, উত্তোলন এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থ স্থানান্তরসহ বিল পরিশোধ করতে পারেন।




আজকের পোস্টে আমরা নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এর চার্জ, নগদ মোবাইল ব্যাংকিং খরচ, নগদ মোবাইল ব্যাংকিং কমিশন, নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা, নগদ মোবাইল ব্যাংকিং ইন্টারেস্ট, নগদ মোবাইল ব্যাংকিং অফার সহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করব। সেই সাথে কিভাবে নিজে নিজে মোবাইল দিয়ে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলতে হয়, সে বিষয়ে পোস্টের শেষাংশে স্ক্রিনশট এর মাধ্যমে পদ্ধতি শেয়ার করব।

নগদ কি?

নগদ কি সেটা আমি পোস্টের শুরুতে বলেছি। বিকাশ এর মত নগদ হচ্ছে ডিজিটাল মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম যেটা বাংলাদেশের সরকারের ডাক বিভাগের উদ্যোগে গঠন করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ ডাক বিভাগ সেটি নিজে পরিচালনা করছে। বিকাশ দিয়ে যেভাবে বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠানো ও টাকা উত্তোলন করা যায়, ঠিক তেমনি নগদ এ আপনার একটি একাউন্ট খোলে, নগদ এর মাধ্যমে টাকা আদান প্রদান করতে পারবেন। সেই সাথে নগদ এর অতিরিক্ত সুবিধা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গাতে যত পোস্ট অফিস আছে, সবগুলো পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিশ্বস্ততার সহিত আর্থিক লেনদেন করতে পারবেন।

এগুলো আপনার কাজে লাগতে পারে

নগদ মোবাইল ব্যাংকিং চার্জ

অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং (যেমন- বিকাশ, রকেট সহ আরো বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং) এর চাইতে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং খরচ অনেকটা কম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম যে দিন নগদ এর সেবা উদ্বোধন করেন, সেদিন তিনি ঘোষনা করেছিলেন নগদ মোবাইল ব্যাংকিং খরচ অন্যান্যদের চাইতে কম করে দেওয়া হবে। 

নগদ এর মাধ্যমে ক্যাশ আউট করলে প্রতি হাজারে ১৪.৫০ পয়সা চার্জ রাখা হয় এবং সেন্ড মানি করলে প্রতিবার ৪ টাকা চার্জ করা হয়। তবে নগদ এর মোবাইল এপস দিয়ে সম্পূর্ণ ফ্রিতে সেন্ড মানি করা যায়।

নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা

প্রান্তিক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য 'নগদ' হবে দারুণ সুযোগ। দিনে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত লেনদেনের সুযোগ থাকায় এটি প্রান্তিক এলাকার ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের আর্থিক লেনদেনের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে সুযোগ তৈরি করবে।

ডাক বিভাগের নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করলে গ্রাহক ক্যাশ ইন অথবা ক্যাশ আউট এর ক্ষেত্রে গ্রাহক প্রতিবার সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বমোট ১০ বারে আড়াই লাখ টাকা দৈনিক লেনদেন করতে পারবেন। এভাবে মাসে সর্বোচ্চ ৫০ বারে ৫ লাখ টাকা ক্যাশ ইন অথবা ক্যাশ আউট করতে পারবেন। নগদ অ্যাকাউন্ট এর মাধ্যমে গ্রাহকরা ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট করার পাশাপাশি সেন্ড মানি ও টপ আপ (মোবাইল অ্যাকাউন্ট রিচার্জ) সুবিধাও গ্রহণ করতে পারবেন।

নগদ গ্রাহকের লেনদেনের লিমিটসমূহ-

  • ক্যাশ ইনঃ দৈনিক ২,৫০,০০০ টাকা (মাসিক ৩,০০,০০০ টাকা)।
  • ক্যাশ আউটঃ দৈনিক ২,৫০,০০০ টাকা (মাসিক ৩,০০,০০০ টাকা)।
  • সেন্ডমানিঃ দৈনিক ২,৫০,০০০ টাকা (মাসিক ৫,০০,০০০ টাকা)।

নগদ মোবাইল ব্যাংকিং Apps

নগদ মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করার সাথে মোবইল এপস লঞ্চ করে। নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এপস এর কারনে মূলত নগদ অতি দ্রুত সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠে। নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এপস ব্যবহার করলে আপনি খুব সহজে নিজে নিজে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট খুলতে পারবেন। এই বিষয়ে আমরা পোস্টের শেষে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনি গুগল প্লে-স্টোর হতে খুব সহজে নগদ এপস ইনস্টল করে নিতে পারবেন।

নগদ মোবাইল ব্যাংকিং অফার

“নগদ–এ আসলেই লাখপতি। এখনই সময় নগদ-এ এসে লাখপতি হওয়ার! তাইতো আপনাদের জন্য ডাক বিভাগের ডিজিটাল লেনদেন “নগদ” নিয়ে এসেছে ‘নগদ–এ লাখপতি’ অফার আর সাথে ২৫ টাকা বোনাস তো আছেই!” এই শিরোনামে বর্তমানে নগদ এর একটি অফার চলছে। আমি এই বিষয় নিয়ে বেশি কিছু বলতে চাইছি না। এই লিংকে ক্লিক করে নগদ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হতে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এর অফার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে পারবেন।

নগদ মোবাইল ব্যাংকিং কমিশন বা মুনাফা

গ্রাহকগণ তাদের নগদ অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পরিমাণের উপর সর্বোচ্চ মুনাফা লাভ করবেন। নগদ-এর সকল নিয়মিত গ্রাহক নিচের ছকে উল্লিখিত হারে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং ইন্টারেস্ট পাবেন-
নগদ মোবাইল ব্যাংকিং কমিশন বা মুনাফা
  • মাসিক ভিত্তিতে মুনাফা প্রদান করা হবে।
  • প্রতিদিনের মুনাফার হার হিসাব করে মাস শেষে মুনাফা প্রদান করা হবে।
  • দেশের আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য ট্যাক্স বা ভ্যাট কর্তনের পর সরাসরি নগদ অ্যাকাউন্টে মুনাফার অংশ পাঠিয়ে দেয়া হবে।
  • গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট স্ট্যাটাস জনিত কোনো সমস্যার কারণে মুনাফা বিতরণ করা না গেলে, সে মাসে উক্ত গ্রাহক কোনো মুনাফা পাবেন না।
  • মুনাফা লাভের জন্য গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট অবশ্যই চালু থাকতে হবে।
  • ‘নগদ’ কোনোরকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই, যেকোনো সময় ক্যাম্পেইনের যেকোনো শর্তাবলি পরিবর্তন বা পরিবর্ধন এমনকি ক্যাম্পেইন বাতিল করারও অধিকার সংরক্ষণ করে।
  • প্রযোজ্য আইন, রেগুলেটরি নির্দেশিকা কিংবা নিজস্ব নীতির উপর ভিত্তি করে, ‘নগদ’ মুনাফা বাতিল করার অধিকার সংরক্ষণ করে।

    নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম

    আপনার পছন্দমত দুটি উপায়ে নগদ একাউন্ট খুলতে পারবেন। গ্রাহকদের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে নগদ একাউন্ট খোলার জন্য দুটি উপায় রেখেছে। নিচের যেকোন উপায়ে আপনার নামে একটি নগদ একাউন্ট খুলতে পারবেন।
    • নগদ এজেন্টের মাধ্যমে একাউন্ট খোলা।
    • নগদ মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিজে নিজে একাউন্ট খোলা।

    এজেন্টের মাধ্যমে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম

    এজেন্টের মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য আপনাকে কিছু ডকুমেন্ট নিয়ে যেকোন বিকাশ এজেন্টের দোকানে যেতে হবে। আপনার শহরে কিংবা গ্রামের যেকোন নগদ এজেন্টের মাধ্যমে খুব সহজে আপনার নামে একটি নগদ একাউন্ট খোলে নিতে পারবেন। এজেন্টের মাধ্যমে নগদ একাউন্ট খোলার জন্য নিচের ডকুমেন্টস নিয়ে যেকোন নগদ এজেন্টের কাছে যেতে হবে।
    • একটি একটিভ মোবাইল নাম্বার।
    • আইডি কার্ডের ফটোকপি (অনলাইন কপি গ্রহনযোগ্য)।
    • আপনার ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

    নিজে নিজে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম

    নিজে নিজে নগদ একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে বিকাশ একাউন্ট খোলার মত খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হয় না। মাত্র কয়েকটি সহজ স্টেপ অনুসরণ করে খুব সহজে একটি নগদ একাউন্ট তৈরি করে নেওয়া যায়। নিজে নিজে নগদ একাউন্ট খুলতে চাইলে প্রথমে আপনার মোবাইলে নগদ এপটি ইনস্টল করে নিতে হবে। তারপর বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য আপনার একটি মোবাইল নাম্বার ও NID এর প্রয়োজন হবে (ফটোকপি গ্রহনযোগ্য নয়)।

    নিজে নিজে নগদ একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমে আপনার মোবাইলের ইন্টারনেট কানেকশন অন করে নগদ এপটি অপেন করে নিতে হবে। (নোটঃ যে সিম দিয়ে নগদ একাউন্ট খুলবেন সেই সিমটি অবশ্যই মোবাইলে একটিভ করে রাখবেন)।
    নিজে নিজে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম
    আপনার মোবাইলের নগদ এপ্লিকেশনটি অপেন করে উপরের চিত্রের ১নং অংশের “রেজিস্ট্রেশন করুন” এ ক্লিক করলে মাঝখানের চিত্রের অপশন শো হবে। এখন মাঝখানের চিত্রের ২নং অংশে আপনি যে মোবাইল নাম্বার দিয়ে নগদ একাউন্ট খুলতে চান, সেটি বাসিয়ে ৩নং অংশের “পরবর্তী ধাপ” লেখা অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। তাপরপর ডান পাশের চিত্রের ৪নং অংশের মাধ্যমে আপনার মোবাইল অপারেট সিলেক্ট করে ৫নং অংশের “পরবর্তী ধাপ” অপশনে ক্লিক করুন।
    নিজে নিজে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম
    এখানে উপরের চিত্রের ১নং ও ২নং অংশে ক্লিক করে আপনার NID এর উভয় পৃষ্ঠার ছবি তুলে নিতে হবে। আপনার NID এর ছবি পরিষ্কারভাবে তুলার পর মাঝখানের চিত্রের ৩নং অংশের “পরবর্তী” লেখা অপশন ক্লিক করলে ডানপাশের চিত্রেরন্যায় আপনার যাবতীয় তথ্য অটোমেটিক শো হবে। তারপর ৪নং অংশের “পরবর্তী” লেখাতে ক্লিক করুন।
    নিজে নিজে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম
    এখন বাম পাশের চিত্রে আপনার কিছু তথ্য সংযোজন করে ১নং অংশের “পরবর্তী” লেখাতে ক্লিক করে ২নং অংশের “পরবর্তী ধাপ” এ ক্লিক করে ডান পাশের চিত্রের ৩নং অংশের মাধ্যমে আপনার ছবি তুলে নিতে হবে। সেলফি তুলার স্টাইলে মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরা আপনার মুখের সামনে ধরে দুইবার চোখের পলক ফেললে অটোমেটিক ছবি উঠে যাবে।
    নিজে নিজে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম
    এখানে ১নং অংশের “পরবর্তী” লেখাতে ক্লিক করে ২নং অংশের “স্কিপ করুন” এ ক্লিক করতে হবে। তারপর ডানপাশের চিত্রের ৩নং অংশে ঠিক মার্ক দিয়ে ৪নং অংশে আপনার নাম অথবা সিকনেচার লিখে ৫নং অংশের “পরবর্তী” লেখাতে ক্লিক করুন। (নোটঃ আপনার মোবাইলের স্ক্রিনে টাচ করে নাম অথবা সিকনেচার লিখতে পারবেন)
    নিজে নিজে নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম
    এখানে উপরের চিত্রের ১নং অংশে “পরবর্তী” এ ক্লিক করে পুনরায় ২নং অংশের “পরবর্তী” লেখাতে ক্লিক করতে হবে। তারপর ডান পাশের চিত্রে ৩নং ও ৪নং অংশে আপনার পছন্দমত একটি পাসওয়ার্ড লিখে ৫নং অংশের সাবমিট এ ক্লিক করলে আপনার নগদ একাউন্ট খোলে যাবে। তারপর ২-৩ দিনের মধ্যে আপনার নগদ একাউন্টটি কনফার্ম করে এসএমএস এর মাধ্যমে আপনাকে জানিয়ে দেওয়া হবে। That's all.

    শেষ কথা

    নগদ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের একটি সরকারী সেবা হওয়ার কারনে আমার মনেহয় বিকাশ এর তুলনায় নগদ এ লেনদেন করাটা অধিক নরাপদ হবে। কাজেই আমাদের সবার উচিত নিজের একটি নগদ একাউন্ট রাখা এবং অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং এর প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে নগদ মোবাইল ব্যাংকিংকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া। 

    নগদ মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। তাছাড়া নগদ একাউন্ট তৈরি করতে কোন সমস্যা হলে, সেটাও কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে রাখতে পারেন।